লাইভ ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, যতদিন না আমরা প্রাথমিক স্কুলগুলোর শিক্ষকদের উন্নত বেতন ও উন্নত সুবিধা দিয়ে সুখী শিক্ষক নিয়োগ না দেবো ততদিন সুন্দর মনের মানুষ তৈরি হবে না।
আরো পড়ুন:
দেশের সকল মাদরাসার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জরুরি নির্দেশ
সোমবার নিজের ভেরিফাইয়েড ফেসবুক আইডির এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক মামুন বলেন, দেশে যখন বাংলা নববর্ষ পালিত হচ্ছে আমি তখন চার দিনের ট্যুরে বের হয়ে এখন স্কটল্যান্ডের আইল অফ স্কাইতে আছি। স্কটল্যান্ড সত্যিই অপরূপ সুন্দর। এটি পাহাড়, পর্বত আর খাল, নদী ও সাগরের মোহনায় ঘেরা। প্রচন্ড শীত এখন। এখানে উঠেছি বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্টে। এটি ইংল্যান্ডের ট্র্যাডিশনাল পরিবার কেন্দ্রিক হোটেল। সাধারণত ইংল্যান্ডে অনেক বুড়ো-বুড়ি অবসরে নিজের বাড়িকেই বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট বানিয়ে ফেলে। গেস্টরা এখানে রাতে ঘুমায় আর সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে ঘুরতে বের হয়ে যায়।
এই সময়ে বুড়ো-বুড়ি (আর সন্তান যদি থাকে তাদের নিয়ে) ঘর গুছিয়ে ফেলে। আমরা যে বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্টে উঠেছি সেটা আটলান্টিক মহাসাগরের একটা মোহনার পারে। অসাধারণ সুন্দর করে গুছানো বাড়ি। এই বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্টের একটি গুণ হলো ওরা প্রধান দরজা থেকে শুরু করে বাড়ির কোনো দরজাই তালাবদ্ধ করে না। এর অর্থ এই জায়গাটি খুবই নিরাপদ।
অধ্যাপক মামুন আরো বলেন, গতকাল যখন ঘুম থেকে উঠে বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট করতে গেলাম। গিয়ে দেখি ট্র্যাডিশনাল ব্রিটিশ ব্রেকফাস্ট খাবারের পাশাপাশি আরো অনেক খাবার ও ফল ও ফলের জুস। প্রত্যেকটি আইটেমের মান সুপার। এই পর্যন্ত স্কটল্যান্ডের কত খাল বিল নদী-নালা ও রাস্তাঘাট দেখলাম।
কোথাও কোনো পলিথিন পড়ে থাকতে দেখলাম না। রাস্তাঘাটগুলো এমন মজবুত করে বানানো ২০-৩০ কিংবা ৫০ বছরেও কিছু হবে না। এর মাধ্যমে মানুষের জীবনকে স্বস্তি দিয়েছে। প্রতিটা বাড়ির সামনে রাস্তায় গাড়ি পড়ে থাকে। গাড়ির জন্য বাড়িতে আলাদা কোনো গ্যারেজ নেই বললেই চলে। আমাদের বাংলাদেশ হলে গাড়ি চুরির মহোৎসব লেগে যেতো।
অধ্যাপক মামুন বলেন, আমাদের দেশে আমি যখন ঢাকার বাহিরে কোথাও ঘুরতে গিয়েছি, দেখেছি সব খাল বিল ও রাস্তার পাশে ময়লা আর পলিথিনের ভাগাড়। এর মাধ্যমে আমরাতো আমাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছিই সঙ্গে পানিতে বাস করা প্রাণিদের জীবনও আমরা দুর্বিষহ করে তুলছি।
আজ ৩ দিন ধরে আমাদের মিনিবাসে করে যখন ঘুরছি একটি হর্নের শব্দ শুনিনি। ইনফ্যাক্ট, ঢাকা থেকে ইতালি হয়ে স্কটল্যান্ডের আসা অবধি কোনো হর্ন শুনিনি। আমাদের ড্রাইভারকে দেখেছি সরু রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বিপরীত পথ থেকে আসা গাড়িকে সাইড দেয়ার একটা প্রতিযোগিতা।
বিপরীত পাশ থেকে গাড়ি আসলেই আমাদের ড্রাইভার এক সাইডে দাঁড়ায় আর দুই ড্রাইভারই একে অপরকে হাতটা সামান্য উঁচিয়ে ধন্যবাদ জানায়। কে কার আগে ধন্যবাদ জানাবে তার প্রতিযোগিতা চলে।
অধ্যাপক মামুন বলেন, এখানে কেউ নদী খাল দখল করতে পারে না, বালু তুলে ব্যবসা করতে পারে না। যেখানে-সেখানে বাড়ি বানাতে পারে না। প্রশ্ন হলো এরা সব কিছু এত অর্ডারড এবং সুন্দর করে রাখে কীভাবে? কারণ হলো এখানকার স্কুল-কলেজগুলো ছোটবেলাতেই অর্থাৎ একদম নার্সারিতে পড়ার সময় এইসব সভ্য আচার ব্যবহার ঢুকিয়ে দেয়। আসলে সব সভ্য দেশেই তা করে।