লাইভ ডেস্ক: ‘চাপ বা স্ট্রেস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’- কথাটি সত্য, তবে আংশিক।
অতিরিক্ত চাপ যেমন শরীর ও মনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, তেমনি সামান্য পরিমাণে উপকারী চাপ আবার মানসিক দৃঢ়তা, শারীরিক সক্ষমতা ও ব্যক্তিত্ব গঠনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘এমোরি ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক এবং ‘এমোরি লাইফস্টাইল মেডিসিন অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ডা. শ্যারন বার্গকুইস্ট সম্প্রতি তার নতুন বই ‘দ্য স্ট্রেস প্যারাডক্স: হোয়াই ইউ নিড স্ট্রেস টু লিভ লংগার, হেলদিয়ার, অ্যান্ড হ্যাপিয়ার’য়ে তুলে ধরেছেন এই ‘স্ট্রেসের মধুর বিন্দু’র কথা।
বার্গকুইস্ট সিএনএন ডটকম’য়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “অতিরিক্ত চাপ যেমন ক্ষতি করে, ঠিক তেমনি খুব কম চাপ থাকাও শরীরের জন্য খারাপ।”
তার মতে, “আমাদের শরীর ও মস্তিষ্ক এমনভাবে গঠিত যে মাঝারি মাত্রার চাপ বা স্ট্রেস দেহের কার্যক্রমকে সচল রাখে, অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ায়, এমনকি দীর্ঘস্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠতেও সাহায্য করে।”
চাপের দুই রূপ: ভালো ও খারাপ
বার্গকুইস্ট, চাপ বা স্ট্রেস বিষয়টাকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন— ভালো চাপ এবং ক্ষতিকর চাপ।
তিনি বলেন, “ভালো চাপ তখনই হয় যখন কোনো লক্ষ্য পূরণের জন্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করি, কঠিন কিছু শেখার চেষ্টা করি, অথবা অর্থবহ কোনো কাজে মন দেই। তখন শরীরে উৎপন্ন হয় ‘ডোপামিন’, ‘সেরোটোনিন’ ও ‘অক্সিটোসিন’-এর মতো হরমোন, যেগুলো উৎসাহিত করে, আনন্দ দেয় ও সামাজিকভাবে যুক্ত হতে সহায়তা করে।”
অন্যদিকে, খারাপ বা ক্ষতিকর চাপ তখন হয় যখন চাপ দীর্ঘস্থায়ী, অনির্দেশ্য বা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এ ধরনের চাপ শরীরে কর্টিসল নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। যা উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বিষণ্ণতার মতো সমস্যা তৈরি করে।
চাপে বেড়ে ওঠা— গবেষকের জীবনের গল্প
বার্গকুইস্ট নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই এই বিষয়ে আগ্রহী হয়েছেন। ইরান বিপ্লবের সময় তার পরিবারসহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
“আমরা ছিলাম শেষ বিমানের যাত্রী যারা ইরান ছেড়েছিলাম”- স্মৃতিচারণ করেন এই চিকিৎসক।
এরপর ইংল্যান্ড হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেও তার জীবন সহজ ছিল না। ইংরেজিতে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লেগেছিল। সেই সংগ্রামের কারণেই তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, তারপর হার্ভার্ড মেডিকেলে পড়াশোনা করতে পেরেছেন।
এই অভিজ্ঞতা থেকেই তার মনে প্রশ্ন জেগেছে— কেন কিছু মানুষ চাপ থেকে পালিয়ে যায়, আবার কেউ সেই চাপকে পুঁজি করে এগিয়ে যায়।
চাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই। বরং প্রয়োজন, চাপকে চিনে নেওয়া ও সঠিকভাবে মোকাবিলা করা।
ডা. বার্গকুইস্ট মনে করেন, “চাপকে পুরোপুরি দূর করার চেষ্টা না করে, বরং সেটিকে সঠিক মাত্রায় নিয়ে আসা দরকার।”
কীভাবে খুঁজে পাবেন স্ট্রেসের মধুর বিন্দু?
ডা. বার্গকুইস্ট পাঁচটি উপায়ে চাপকে ইতিবাচক রূপে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন—
প্রথমত: নিজেকে একটু চ্যালেঞ্জ দিন, তবে খুব বেশি নয়। যেটুকু চাপ আপনাকে শেখায়, এগোতে সহায়তা করে— সেটুকু নিন। কিন্তু এমন চাপ নয় যা আপনাকে ভেঙে দেয়।
দ্বিতীয়ত: নিজের বিশ্বাস ও জীবনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চ্যালেঞ্জ নিন। কোনো কাজ যদি আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মেলে না, তবে তা ক্ষতিকর চাপের জন্ম দিতে পারে।
তৃতীয়ত: পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুনরুদ্ধারের সময় দিন। শুধু কাজ বা সংগ্রাম নয়— বিশ্রামও অত্যন্ত জরুরি। না হলে ভালো স্ট্রেসও এক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
চতুর্থত: মানসিক ও শারীরিক স্ট্রেস একে অপরকে শক্তিশালী করে। দেহচর্চা যেমন- মানসিক দৃঢ়তা বাড়ায়, তেমনি মানসিক প্রশিক্ষণও শরীরকে উন্নত করতে পারে।
পঞ্চমত: নিজের ভেতরের ক্ষমতার ওপর আস্থা রাখুন। মানুষ হিসেবে আমরা অভিযোজনের জন্যই গঠিত হয়েছি। চাপকে ভয় না পেয়ে, তাকে ব্যবহার করুন নিজের উন্নয়নে