বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৪ অপরাহ্ন

হাতে বেশি সময় নেই নির্বাচনের সময় জানিয়ে দিলেন, ড.মুহাম্মদ ইউনুস

লাইভ ডেস্ক
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫
  • ৩২ Time View

লাইভ ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা এরই মধ্যে সাত মাস পার করে এসেছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কী কী সংস্কার করতে চাই করে ফেলতে হবে।


গতকাল সোমবার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের ১২৭ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

এ ছাড়া নির্বাচন আসন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচন আসছে, নানা রকম সমস্যা হবে, নানা রকম চাপ আসবে। অনেকে ডেসপারেট হয়ে যাবে, আমার কেন্দ্রে জেতাতে হবে, ওর কেন্দ্রে জেতাতে হবে। সেখানে পুলিশ আইন মানাতে চাইলে তারা খেপাখেপি করবে।

আমাদের সেখানে শক্ত থাকতে হবে, আইনের ভেতরে থাকতে হবে, যাতে যে সরকার নির্বাচিত হয়ে আসবে, সে সরকার আইনের সরকার হয়। যে আইন ভেঙে আসবে, সে কখনো আইন ধরে রাখতে পারবে না। কারণ আইন ভাঙাই তার অভ্যাস।’
প্রধান উপদেষ্টার গতকালের এই বক্তব্যে অনেকেরই ধারণা, অন্তর্বর্তী সরকার ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’-এর দিকেই যাচ্ছে।

গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচব আন্তোনিও গুতেরেসকে তিনি জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বরে কিংবা আগামী বছরের জুনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে তারা যদি ‘বৃহত্ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগেও প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে আগামী ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের কথা বলেছেন। কখনো আগামী বছরের জুনের বদলে মার্চের কথাও বলেছেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির দক্ষিণ এশীয় প্রতিনিধি সামিরা হুসেইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে এই নির্বাচন হবে। প্রত্যাশা অনুসারে সংস্কার হলে নির্বাচন হবে ডিসেম্বরে, আর সংস্কারের জন্য বেশি সময় দরকার হলে নির্বাচন হতে আরো কয়েক মাস সময় লাগবে। তার আগে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘তবে কি বলা যায় নির্বাচনটা এ বছরের মধ্যেই হচ্ছে’—এই প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা তো সেটাই ঘোষণা করে দিয়েছি। আবার নতুন করে বলার তো কিছুই নেই।’ গত ৩ মার্চ বিবিসি বাংলার এই সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়।

আবার প্রায় একই সময়ে স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে বলে জানান। এ ছাড়া গত ৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দুই কূটনীতিক উইলিয়াম বি মাইলাম ও জন ড্যানিলোউইচকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছিলেন, এপ্রিল অথবা মার্চে নির্বাচন হতে পারে। ওই দিন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে আমাদের প্রেস সচিব বারবার জানিয়েছেন, এ বছরের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের জুনে নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমের কারণে আরো দু-তিন মাস এগিয়ে মার্চে হতে পারে।’ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি এই সম্ভাবনার কথা বলেন।

বর্ষার কারণে জুন মাসে নির্বাচন সম্ভব নয়—এই ধারণা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনেরও। সম্প্রতি নির্বাচন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে তিনি এই ধারণার কথা জানান। এ ছাড়া সিইসি বলেছেন, ‘আমরা ডিসেম্বরের টাইমলাইন অতিক্রম করতে চাই না।’

এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এ বছরের শেষ নাগাদ, নাকি আগামী বছরের জুনের মধ্যে হবে তা নির্ভর করছে জুলাই চার্টারের ওপর।’ রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ ছয়টি কমিশনের গ্রহণযোগ্য সুপারিশগুলো সম্পর্কে ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে এই জুলাই চার্টার তৈরি হবে।

কবে নির্বাচন হতে পারে সে সম্পর্কে প্রথম ধারণা পাওয়া যায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর। ওই দিন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ওয়েবসাইটে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করে ১৮ মাস বা দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচনের লক্ষ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে যেকোনো পরিস্থিতিতে পূর্ণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

এর পাঁচ মাস পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমি যতবারই ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছি, হি কমপ্লিটলি অ্যাগ্রিড উইথ মি, দেয়ার শুড বি ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ইলেকশন অ্যান্ড দ্যাট ইলেকশন শুড বি উইদিন ডিসেম্বর অর…(আমি যতবারই ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছি তিনি সম্পূর্ণভাবে আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হওয়া উচিত এবং সেই নির্বাচন হওয়া উচিত ডিসেম্বরের মধ্যে বা…)। যেটি আমি প্রথমেই বলেছিলাম, ১৮ মাসের মধ্যে একটি ইলেকশন। আমার মনে হয়, সরকার সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে।’ গতকাল প্রধান উপদেষ্টা পুলিশের উদ্দেশে আরো বলেন, ‘আপনারাও সংস্কারের কথা বলেছেন। কারো জন্য অপেক্ষা করে কোনো ফায়দা হবে না। কাজটা করতে হবে এবং সেটা আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশ বদলাতে হলে একক নির্দেশে নয়, বরং সবাইকে নিয়ে একেকটি টিম হয়ে কাজ করতে হবে এবং বাংলাদেশে যত টিম আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিম হলো পুলিশ।

তিনি বলেন, ‘সরকার যা কিছুই করতে চায়, শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাত দিয়েই করতে হয়। তারা সব করে দেয় না, তারা পরিবেশটা সৃষ্টি করে; যে পরিবেশটা না থাকলে কোনো কাজই আর হয় না।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘পুলিশের কথা প্রসঙ্গে বারবার আমরা দুটি শব্দ বলছি। আইন ও শৃঙ্খলা। পুলিশের হাতেই এটাকে এক্সিকিউট করতে হবে। এই পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে সরকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মানুষের অধিকার, নাগরিকের অধিকার কিছুই থাকে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়তে পারব না। তারাই সম্মুখ সারির মানুষ। তারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করলেই বাকি জিনিসগুলো হয়। আইন-শৃঙ্খলা না থাকলে যত বড় বড় চিন্তাই হোক, যত টাকাই থাকুক, কোনো কাজে আসবে না।’

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজ করতে পুলিশের অত্যন্ত বেগ পেতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এগুলো সমাধানের চেষ্টা করব।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফলে আমরা মস্ত বড় সুযোগ পেয়েছি। এটাকে যেন হারিয়ে না ফেলি। আমরাও সেটা চেষ্টা করব, ভবিষ্যতে যারা আসবে তারাও আশা করি চেষ্টা করবে। পথটা যেন আমরা সৃষ্টি করে দিই।’

এই পথ সৃষ্টির ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনী একটা মস্ত বড় ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, ‘লণ্ডভণ্ড অবস্থার মধ্যে আমরা এই যাত্রা শুরু করলাম। সারা দুনিয়ার যত দেশ আছে, সবাই আমাদের সমর্থন করল। শুধু মিনমিনে সমর্থন নয়, উৎসাহভরে এগিয়ে এলো। তারা মনে করেছে, এই দেশ উঠে দাঁড়াতে পারলে ভালো সঙ্গী হবে সবার। আমাদের ওপরে তারা ভরসা করে।’

তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীর মুশকিল হলো, ওই অন্ধকার যুগে তাদের অ্যাকটিভ পার্টিসিপেন্ট ছিল। নিজের ইচ্ছায় নয়, সরকারি কাজ করতে গিয়ে হয়েছে। কাজেই নতুন বাংলাদেশে পুলিশকে দেখিয়ে দিতে হবে, আমরা মানুষ খারাপ নই, খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়েছিলাম, সেখান থেকে বের হয়ে এসেছি। দেখো আমরা কী করতে পারি। কাজের মাধ্যমে আমরা দেখাব যে আমাদের হাত দিয়েই এই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে। আমরা বড় রকম ভূমিকা পালন করব। কারণ আমাদের কাছেই রয়েছে আইন ও শৃঙ্খলা। এটা প্রতিষ্ঠা করব। পুলিশ হবে বন্ধু। কারণ আমি আইনের পক্ষের মানুষ। আমি আইন প্রতিষ্ঠা করার মানুষ। আইন হলো আমাদের সবার আশ্রয়। পুলিশ হলো আশ্রয়দাতা। আমরা এই ইমেজটা যদি প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, মানুষ অতীতের সব কথা ভুলে যাবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘১৬ বছরের ইতিহাস আমরা বদলাতে পারব না। ১৬ বছরের কালিমা সারা গায়ে মাখা আছে, রাতারাতি সেটা পাল্টাতে পারব না। একজন মানুষ হিসেবে আমি কর্তব্য নির্ধারণ করতে পারি, সম্পূর্ণ নতুন ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি। নতুন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী হিসেবে আমাদের করণীয় ঠিক করতে হবে। অতীত নিয়ে কান্নাকাটির দরকার নেই। নতুনের জন্য আমরা প্রস্তুত এবং এটা করে দেখাব।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ সম্পর্কে ইমেজ হলো, তারা খারাপটাই আগে দেখে, খারাপটা আগে করে। কিন্তু আমরা ভালোটা আগে দেখব, ভালোটা আগে করব। দু-একজন করাপ্ট হলে বাহিনী পাল্টায় না। বাহিনী সামগ্রিকভাবে একটা কাঠামো এবং এই কাঠামোর অনেক শক্তি।’

পুলিশকে নতুন শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষকে বাধা দেব না। তার পথকে সহজ করব। তার পাশে থাকব। তাহলে দেখব যে এ দেশের কোনো সমস্যা হবে না। শুধু মানুষের পাশে থেকে তাদের আইনের ভেতরে রাখতে হবে। মানুষকে বলতে হবে, আইনের ভেতরে থাকেন, আপনার যা দরকার আমি করে দেব।’

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এবং রাজশাহী পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102