লাইভ ডেস্ক: ঈদ ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাবনায় আসছেন ঘরমুখো মানুষ। সড়কপথে ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার মানুষ ফিরছেন। তবে বিপত্তি বাধছে জেলার কাজিরহাট থেকে পাবনা পর্যন্ত সড়কগুলোতে। যাত্রীচাপকে কাজে লাগিয়ে এসব সড়কে বিভিন্ন যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আরো পড়ুন:
পাবনায় বালুমহাল নিয়ন্ত্রণে নিতে ফিল্মি স্টাইলে গুলিবর্ষণ, ভারি অস্ত্র নিয়ে মহড়া
জানা যায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় কাজিরহাট থেকে কাশিনাথপুরের নিয়মিত ভাড়া ৩০ টাকা ও কাশিনাথপুর থেকে বেড়া বাসস্ট্যান্ডের ভাড়া ৩০ টাকা। সরাসরি কাজিরহাট থেকে বেড়ার ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা। কিন্তু ঈদে যাত্রীচাপকে কাজিয়ে লাগিয়ে এ সড়কে ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
একইভাবে বেড়া থেকে পাবনা শহর পর্যন্ত বাস ভাড়া ৮০ টাকা হলেও এখন নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। কোনো কোনো সময় এরও বেশি নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বুধবার (৪ জুন) মধ্যরাতে কাজিরহাট ঘাট এলাকায় সতর্কতামূলক অভিযানও চালিয়েছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকালে সরেজমিনে উপজেলার কাজিরহাট বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, বেড়া ও কাশিনাথপুর যাওয়ার অপেক্ষায় অসংখ্য অটোরিকশা সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে। সিরিয়াল অনুযায়ী সামনে থাকা অটোরিকশাগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই যাত্রীভর্তি হয়ে কাশিনাথপুর ও বেড়ার উদ্দেশে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক ধরে ছুটে যাচ্ছে। যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা।
হারুন ও আসিফ নামে দুজনসহ কয়েকজন যাত্রী জানান, শুধু সিএনজি নয়, যেকোনো যানবাহনের চালকদের সঙ্গে সাধারণ সময়েই পারা যায় না, সেখানে এখন ভিড়ের মধ্যে কীভাবে পারবো? এখন কারো সঙ্গে কথাই বলা যাচ্ছে না। খুব বাজে আচরণের শিকার হতে হয়। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়েই যেতে হচ্ছে।
‘বাড়তি ভাড়া চালকদের কাছে বোনাস, আমাদের জন্য ভোগান্তি’
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঈদ বা যেকোনো উৎসবকে তারা অতিরিক্ত টাকা কামানোর উৎসবে পরিণত করে। দুদিন পর ঈদ, পবিত্রতার কিছু তো দেখি না কারো মাঝে। সবাই আরও লুটের চেষ্টায় আছে। সর্বোচ্চ ৬০ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০০ বা ১২০ টাকা। এরপর আবার পাবনা অবধি যেতে বাস চালকরা ৮০ টাকার ভাড়া নেবে ১৩০-১৫০ টাকা। গতকালও আমাদের পরিচিত কয়েকজন বাড়ি গেছে। তাদের থেকে এভাবেই নিয়েছে। এসব নিয়ে কিছু বললে তারা বলে, ভাই বছরে এক-দুইবারই তো নেই। এগুলো চালকদের কাছে বোনাস, আর আমাদের জন্য ভোগান্তি। এভাবেই চলতে হচ্ছে।
এদিকে অতিরিক্ত ভাড়া না নিলে পোষায় না বলছেন চালকরা। রিপন, মিজান ও ইকবাল হোসেনসহ কয়েকজন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক জানান, বেড়া ও কাশিনাথপুর থেকে ফেরার পথে প্রায় খালি আসতে হচ্ছে। এছাড়া সারা বছর তেমন আয় হয় না। তাই ঈদের সময়ে কিছুটা বেশি ভাড়া নিয়ে থাকেন। সবাই খুশি মনেই দেয়। এগুলো কোনো সমস্যা না।
বেড়া থেকে পাবনাগামী একাধিক বাসের চালক বলেন, ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে না। বেড়া থেকে পাবনা পর্যন্ত নির্ধারিত ভাড়া ১৩৪ টাকা। ঈদের আগে যাত্রীদের সুবিধার্থে কিছুদিন ৮০ টাকা নেওয়া হয়েছে। এখন নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা করে। এখানে বেশি নেওয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে মাধপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আইন অনুযায়ী এমনিতেই মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের সুযোগ নেই। সেখানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি গুরুতর। বিষয়টি নজরদারিতে রাখা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ঈদযাত্রায় কোনো ধরনের ভোগান্তি সৃষ্টি করা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মাধ্যমে যাত্রী ভোগান্তি করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি।